Article

আর্টিকেল বা প্রবন্ধ কি?

‘প্রকৃষ্ট বন্ধন যার’ তাই প্রবন্ধ। ‘প্রকৃষ্ট বন্ধন’ বলতে বোঝায় বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে। নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকে প্রবন্ধ বলে । প্রবন্ধ রচনার বিষয়, ভাব, ভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ । প্রকৃত পক্ষে তথ্যবহুল রচনা হলো প্রবন্ধ; যেখানে কোন চরিত্র থাকবে না। প্রবন্ধ একটি বিষয়কে যতটুক বিস্তৃত বিশ্লেষণে তুলে ধরে নিবন্ধ তা করে না। ঠিক উপন্যাস আর বড় গল্পের মত।

আরও সহজ ভাষায় বললে  আর্টিকেল বা প্রবন্ধ হলো একধরনের সাহিত্য রচনা যেখানে কোনো বিষয় বা ঘটনার উপর লেখকের মতামত, বিশ্লেষণ, তথ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়। এটি একটি তথ্যবহুল, সুসংগঠিত ও চিন্তাশীল রচনা যা পাঠককে নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান প্রদান করে এবং তার চিন্তার প্রসার ঘটায়। প্রবন্ধ সাধারণত দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ব্লগ, একাডেমিক জার্নাল ইত্যাদিতে প্রকাশিত হয়।

অপর দিকে ‘নির্দিষ্ট বন্ধন যার’ সেটি নিবন্ধ। প্রকৃষ্টতার উল্লেখ না থাকলেও নিবন্ধ প্রকৃষ্ট বন্ধনমন্দ্রিত অপেক্ষাকৃত স্বল্প অবয়বের একটি প্রবন্ধ। যেখানে লেখক একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নিজের প্রকৃষ্ট বিচরণ প্রকম্পিত রাখেন। নিবন্ধের নির্দিষ্টতা এর বন্ধন, বিস্তৃতি ও গভীরতাকে সীমাবদ্ধ রাখার প্রেরণা যোগায়। যদিও এটি কেবল বিস্তারভিত্তিক নয়; বরং বিশ্লেষণ যৌক্তিকতার আদলভিত্তিক। নিবন্ধে নির্ধারিত বিষয়কে তুলের ধরার জায়গা সীমিত। তাই অল্পকথায় বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলে ধরা প্রয়োজন।নিবন্ধ হচ্ছে একটি এক ধরনের লেখা যা কাগজে বা  ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। খবর, গবেষণা, শিক্ষা, বিতর্ক ইত্যাদি উদ্দেশ্যে নিবন্ধ হতে পারে।

প্রবন্ধ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন, বর্ণনামূলক প্রবন্ধ, তাত্ত্বিক প্রবন্ধ, বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ, সমালোচনামূলক প্রবন্ধ ইত্যাদি। প্রবন্ধের ধরন ও প্রকৃতি নির্ভর করে লেখকের উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু এবং পাঠকের ওপর। প্রবন্ধ লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো পাঠককে শিক্ষিত করা, কোনো সমস্যা বা বিষয় সম্পর্কে সচেতন করা, মতামত প্রকাশ করা এবং পাঠকের চিন্তার জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। তাই একটি সফল প্রবন্ধ লেখার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করা প্রয়োজন।

আর্টিকেল বা প্রবন্ধ লিখার ধাপসমূহ

১. বিষয় নির্বাচন

আর্টিকেল লেখার প্রথম ধাপ হলো বিষয় নির্বাচন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার প্রবন্ধের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে বিষয়ের উপর। বিষয় নির্বাচন করার সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:

  • আগ্রহ: এমন একটি বিষয় নির্বাচন করুন যা আপনার কাছে আকর্ষণীয় এবং যার সম্পর্কে আপনি প্রচুর তথ্য জানেন বা জানার আগ্রহ রাখেন।

  • পাঠকের আগ্রহ: পাঠক কোন ধরণের বিষয় সম্পর্কে পড়তে আগ্রহী তা জানা জরুরি। এটি প্রবন্ধকে আরো পাঠকপ্রিয় করবে।

  • উপযোগিতা: বিষয়টি সময়োপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত যাতে পাঠক এটি পড়ে উপকৃত হতে পারে।

২. গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহ

বিষয় নির্বাচন করার পর, পরবর্তী ধাপ হলো ব্যাপক গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহ। ভালো প্রবন্ধ লেখার জন্য প্রয়োজন সুস্পষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য। গবেষণা করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:

  • বিশ্বস্ত সূত্র: বই, একাডেমিক জার্নাল, বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।

  • বিবিধ তথ্য: তথ্য সংগ্রহ করার সময় বিষয়টির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করুন। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন যাতে প্রবন্ধটি বিস্তারিত ও সমৃদ্ধ হয়।

  • নোট গ্রহণ: গবেষণা করার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, উদ্ধৃতি এবং ধারণাগুলো নোট করুন। এটি লেখার সময় কাজে লাগবে।

৩. রূপরেখা প্রণয়ন

তথ্য সংগ্রহ করার পর, পরবর্তী ধাপ হলো প্রবন্ধের রূপরেখা প্রণয়ন করা। এটি লেখার প্রক্রিয়াকে সহজ ও সুশৃঙ্খল করে। রূপরেখা প্রণয়ন করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:

  • পরিচিতি: প্রবন্ধের শুরুতে একটি পরিচিতিমূলক অনুচ্ছেদ থাকবে যা বিষয়টির সারাংশ এবং লেখার উদ্দেশ্য তুলে ধরবে।

  • মূল অংশ: প্রবন্ধের মূল অংশে বিভিন্ন উপ-শিরোনাম অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রতিটি উপ-শিরোনামের অধীনে সংশ্লিষ্ট তথ্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করুন।

  • উপসংহার: প্রবন্ধের শেষ অংশে একটি উপসংহার থাকবে যা মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করবে এবং পাঠককে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সুযোগ দেবে।

৪. খসড়া তৈরি

রূপরেখা তৈরি করার পর, পরবর্তী ধাপ হলো প্রবন্ধের খসড়া তৈরি করা। এটি হলো মূল লেখার প্রথম ধাপ। খসড়া লেখার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:

  • স্বাভাবিকতা: প্রথম খসড়া লেখার সময় বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা এবং যুক্তির উপর বেশি গুরুত্ব দিন। শব্দচয়ন এবং ভাষার শুদ্ধতা নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না।

  • বিস্তারিত বর্ণনা: প্রতিটি অনুচ্ছেদে বিস্তারিত তথ্য ও বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত করুন। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি উপস্থাপন করুন।

  • উদাহরণ ও উদ্ধৃতি: প্রবন্ধে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ ও উদ্ধৃতি যোগ করুন। এটি প্রবন্ধকে আরও বিশ্বাসযোগ্য ও প্রমাণসমৃদ্ধ করে তুলবে।

৫. সম্পাদনা ও পরিমার্জনা

প্রথম খসড়া লেখার পর, পরবর্তী ধাপ হলো সম্পাদনা ও পরিমার্জনা। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ কারণ সম্পাদনা ও পরিমার্জনার মাধ্যমে প্রবন্ধের গুণগত মান বাড়ানো যায়। সম্পাদনা ও পরিমার্জনার সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:

  • ভাষার শুদ্ধতা: বানান, ব্যাকরণ এবং যতি চিহ্নের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন।

  • সংগঠন: প্রবন্ধের ধারাবাহিকতা ও লজিক্যাল ফ্লো পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে অনুচ্ছেদগুলো পুনর্বিন্যাস করুন।

  • সংক্ষেপণ: অপ্রয়োজনীয় শব্দ, বাক্য বা অনুচ্ছেদ বাদ দিন। প্রবন্ধকে সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক রাখুন।

  • তথ্যের সঠিকতা: প্রবন্ধে প্রদত্ত তথ্য ও পরিসংখ্যানের সঠিকতা যাচাই করুন।

৬. চূড়ান্ত প্রবন্ধ

সম্পাদনা ও পরিমার্জনার পর, চূড়ান্ত প্রবন্ধটি তৈরি করুন। চূড়ান্ত প্রবন্ধটি প্রস্তুত করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:

  • আকর্ষণীয় শিরোনাম: একটি আকর্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক শিরোনাম নির্বাচন করুন যা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে।

  • পরিচ্ছেদ বিভাজন: প্রবন্ধটি পরিষ্কার ও সুসংগঠিত রাখার জন্য পরিচ্ছেদ বিভাজন করুন।

  • উপসংহার: উপসংহারে প্রবন্ধের মূল পয়েন্টগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরুন এবং পাঠককে ভাবনার খোরাক দিন।

৭. প্রকাশ ও প্রতিক্রিয়া

চূড়ান্ত প্রবন্ধটি প্রস্তুত হওয়ার পর, এটি প্রকাশ করুন। প্রবন্ধ প্রকাশের পর, পাঠকদের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করুন। পাঠকদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া প্রবন্ধের মান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

পরিশেষে বলব, আর্টিকেল বা প্রবন্ধ লেখার প্রক্রিয়া একটি সৃজনশীল ও চিন্তাশীল কাজ যা লেখকের জ্ঞান, মতামত ও বিশ্লেষণী ক্ষমতাকে প্রকাশ করে। সফল প্রবন্ধ লেখার জন্য বিষয় নির্বাচন, গবেষণা, রূপরেখা প্রণয়ন, খসড়া তৈরি, সম্পাদনা ও পরিমার্জনা এবং চূড়ান্ত প্রবন্ধ প্রস্তুতির ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রবন্ধ লেখার প্রতিটি ধাপেই যত্নশীল ও সৃজনশীল হওয়া প্রয়োজন যাতে প্রবন্ধটি তথ্যবহুল, সুসংগঠিত ও প্রাসঙ্গিক হয়।

বোনাস টিপস:

আত্মবিশ্বাসের সাথে লিখুন: আপনার অনন্য ভয়েস এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে ভয় পাবেন না। বিরতি নিন এবং পরে ফিরে আসুন; একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আপনার লেখার উন্নতি করতে পারে।

অনুশীলন নিখুঁত করে তোলে: আপনি যত বেশি লিখবেন, আপনি তত ভাল হয়ে উঠবেন। মনে রাখবেন, এটি একটি সাধারণ নির্দেশিকা। আপনি যে নিবন্ধটি লিখছেন তার উপর নির্ভর করে (সংবাদ প্রতিবেদন, ব্লগ পোস্ট, গবেষণাপত্র), অতিরিক্ত বিবেচনা থাকতে পারে।

1 Comment

Leave a Comment